আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে টিবি মুক্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হলে ও সঠিক চিকিৎসা হলে টিবি রোগকে নির্মূল করা সম্ভব। টিবি সম্পর্কে সকল অংশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। সোমবার সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় টাউন হলে আয়োজিত টিবি মুক্ত ত্রিপুরা গঠনের লক্ষ্যে রাজ্যভিত্তিক ১০০ দিনের প্রচারাভিযান কর্মসূচির উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সারা দেশকে টিবি মুক্ত রাখতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ উদ্যোগে সারা দেশে শুরু হয়েছে ১০০ দিন ব্যাপী টিবি মুক্ত ভারত ক্যাম্পেইন। এরই অংশ হিসেবে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, টিবি মুক্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চন্ডিগড়ে অনুষ্ঠিত এনডিএ’র মুখ্যমন্ত্রী ও উপ মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে শেষমুহূর্তে আমাকে ত্রিপুরায় টিবি মুক্ত অভিযান সম্পর্কে বলতে হয়েছে। টিবি নিয়ে অনেকের ধারণা আছে যে এটা শুধু ফুসফুসে হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে টিবি শরীরের যেকোন জায়গায় হতে পারে। মস্তিষ্ক, কিডনি, চামড়া পর্যন্ত যেতে পারে টিবি। ত্রিপুরায় এখন টিবি ভালো মাত্রায় টেস্টিং করা যায়। আগে যেটা ছিল না। কিন্তু আমরা এখন সেই ব্যবস্থা করেছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে সবচাইতে টিবি হওয়ার প্রবণতা থাকে। তবে যেকোন ব্যক্তির কাছে যদি মাইক্রো ব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলার শ্বাসের মাধ্যমে যায় তবে সেখান থেকেও টিবি হতে পারে। টিবির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন হয়। টিবি রোগকে নির্মূল করা সম্ভব যদি যথাযথভাবে তাকে চিহ্নিত করা যায়। সেই সঙ্গে অবশ্যই টিবি সম্পর্কে সচেতনতা থাকতে হবে। টিবি রোগ ভয় পাওয়ার বিষয় নয়। টিবি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের অবগত করতে হবে। এনিয়ে পঞ্চায়েতকেও সচেতনতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ২০২৫ এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো টিবি নির্মূল করা সম্ভব হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। দক্ষিণ ত্রিপুরা, সিপাহীজলা ও উত্তর জেলায় বাল্যবিবাহের প্রবনতা রয়েছে। আর এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা আরো বলেন, ড্রাগস ব্যবহার থেকে এখন এইচআইভির সংক্রমণ হচ্ছে। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েদের মধ্যেও এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবিষয়টি নির্মূল করার জন্য রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এজন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে নেশামুক্ত কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিপাহীজলা জেলাতে ডোনার মন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নেশামুক্ত কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিবি মুক্ত ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে এবছর সারা দেশের ৩৪৭টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজ্যের ৫টি জেলা সিপাহীজলা জেলা, গোমতী জেলা, দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলা ও উনকোটি জেলা রয়েছে। যেখানে ১০০ দিন ব্যাপী টিবি মুক্ত অভিযান চালানো হবে। তবে শুধু সরকার বা দপ্তর নয়, এই অভিযানে সমস্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস এলিমিনেশন প্রোগ্রামে ৫ বছরে ৫০ লক্ষ জনসংখ্যায় আমরা প্রথম স্থান অর্জন করেছি। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপাহীজলা জেলার সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়ক সুশান্ত দেব, বিধায়ক তফাজ্জ্বল হোসেন, বিশালগড় পুর পরিষদের চেয়ারম্যান অঞ্জন পুরকায়স্থ, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, মেম্বার সেক্রেটারি ডাঃ নুপূর দেববর্মা, সিপাহীজলা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ দেবাশিস দাস সহ অন্যান্য পদাধিকারীগণ। এদিন এই বিশেষ অনুষ্ঠানে নিক্ষয় মিত্র, টিবি চ্যাম্পিয়নস,আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানগন সহ এই ক্যাম্পেইনে সংযুক্ত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সাথে ক্যাম্পেইনে সংযুক্ত নিক্ষয় বাহনের শুভসূচনা করেন।