আঞ্চলিক সরস মেলার আয়োজন শুধুমাত্র স্বসহায়ক দলের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী প্রদর্শনের একটি মঞ্চ নয়। এই মঞ্চ রাজ্যের নারীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতারও মঞ্চ। এই মেলা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন এনেছে। আজ হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ১৯তম আঞ্চলিক সরস মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগে এই আঞ্চলিক সরস মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৩দিনব্যাপী এই মেলা আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এবারের সরস মেলার ভাবনা হলো ‘লাখপতি দিদি ত্রিপুরার অগ্রগতি’।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলি। নারী ক্ষমতায়ন ও আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনে স্বসহায়ক দলগুলির উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সরস মেলার। মহিলাদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মহিলাদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন মহিলাদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন হলে দেশ ও রাজ্যগুলির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার মাটি সবসময়ই তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সৃজনশীলতার জন্য বিখ্যাত। ২০২২-২৩ সালের সরস মেলায় মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪.৫৭ কোটি টাকা। এবছর তা আরও বাড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহায়তায় মহিলা স্বসহায়ক দলের ৩টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন তাদের উৎপাদিত ৩টি পণ্য যথাক্রমে ঐতিহ্যবাহী রিসা, পাছড়া ও মাতাবাড়ি পেড়ার জন্য জিআই ট্যাগ পেয়েছে, যা অত্যন্ত গর্বের। এরফলে ত্রিপুরার উৎপাদিত পণ্য যেমন সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করছে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ৫২ হাজারের বেশি স্বসহায়ক দল রয়েছে। এই স্বসহায়ক দলগুলির সঙ্গে ৪ লক্ষ ৭৩ হাজারের বেশি মহিলা যুক্ত হয়েছেন। স্বসহায়ক দলগুলিকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা রিভলভিং ফান্ড দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও জীবিকার জন্য মোট ৬২৬.৯৭ কোটি টাকা কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডও দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগে ৩,৭৪, ১৮৪ জন স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা এবং ৩,০৪,৩৭৪ জন স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়াও ২১,৮০১ জন সদস্যাকে অটল পেনশন যোজনার আওতায় আনা হয়েছে।
স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের সুবিধার্থে গ্রামীণ সংগঠন বা ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সরল করার উদ্দেশ্যে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন ৭ দিনে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছে। এটা দেশে একটি ব্যতিক্রমী নিদর্শন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে স্বসহায়ক দলের মধ্যে লাখপতি দিদির সংখ্যা ছিল ৮৩,৪২৪ জন। আগামীদিনে স্বসহায়ক দলের ১ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি সদস্যাকে লাখপতি দিদিতে পরিণত করার জন্য কাজ চলছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্বসহায়ক দলগুলির উল্লেখযোগ্য কাজের সাফল্য ও স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কারগুলির কথাও উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার মহিলা সদস্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২,৫৭,৩৬৮ জনকে মহিলা কিষাণ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের জীবিকা মানোন্নয়নের কাজ চলছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এই সরস মেলার সার্বিক সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সাফল্য সম্বলিত একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর বলেন, এবছর সরস মেলায় ৩৯৯টি স্টল খোলা হয়েছে। এরমধ্যে স্বসহায়ক দলের স্টলের সংখ্যা ৩৬৩টি। বহিরাজ্যের স্বসহায়ক দলের স্টল রয়েছে ১০টি এবং ২৬টি স্টল রয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের। অনুষ্ঠানে তাছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিধায়ক মিনারাণী সরকার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি বলাই গোস্বামী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অজিত শুরুদাস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অতিথিগণ মেলা প্রাঙ্গণে স্টল পরিদর্শন করেন।