অনেক রোগী এখন হাসপাতালে ভিড় করছেন, যাদের জ্বর প্যারাসিটামলের মতো ওষুধে সহজে নামছে না। চিকিৎসকদের মতে, এর প্রধান কারণ ওষুধের অকার্যকারিতা নয়, বরং ভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃতি এবং রোগীদের শারীরিক অবস্থা।
চিকিৎসকদের মতে, চলতি বছরের ভাইরাল সংক্রমণ অনেক বেশি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। ফলে এককভাবে প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। পিএসআরআই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. প্রশান্ত সিনহা জানান, “এই সিজনে ভাইরাসগুলির তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে অনেক সময় শুধু প্যারাসিটামল কার্যকর হচ্ছে না।”
ডা. সিনহার মতে, শরীরে জলের ঘাটতি, অপুষ্টি, ভুল মাত্রায় ওষুধ খাওয়া কিংবা সময়ের ব্যবধান না মেনে ওষুধ নেওয়ার ফলেও কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ডেঙ্গু, ফ্লু, টাইফয়েড কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকেও এমন জ্বর হতে পারে, যা শুধু প্যারাসিটামলে সহজে কমে না।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, “প্যারাসিটামল মূলত মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু শক্তিশালী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জ্বর আংশিক কমলেও পুরোপুরি না-ও কমতে পারে।”
চিকিৎসকদের পরামর্শ, যদি ৪৮ ঘণ্টা ধরে জ্বর থাকে এবং সঠিক মাত্রায় ওষুধ খাওয়ার পরও না কমে কিংবা জ্বর ১০২–১০৩ ডিগ্রির ওপরে থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত যদি মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, পেটব্যথা বা অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
শিশু, বৃদ্ধ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগী ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষদের ক্ষেত্রে হালকা জ্বর হলেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, শুধু ভাইরাল সংক্রমণ নয়, নিউমোনিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা টাইফয়েডের মতো রোগ থেকেও দীর্ঘস্থায়ী জ্বর হতে পারে। তাই শুধু জ্বর কমানো নয়, তার উৎস খুঁজে বার করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত পরীক্ষা, ডেঙ্গু বা ফ্লু টেস্ট, এক্স-রে ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নির্ধারণ প্রয়োজন।
যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। তবে নিজের থেকে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বা শক্তিশালী ওষুধ খাওয়া উচিত নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সবশেষে, চিকিৎসকদের বক্তব্য, হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল এখনও কার্যকর। তবে জ্বর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শরীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তখন ওষুধের উপর নির্ভর না করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। জ্বরকে অবহেলা না করে তার পেছনের কারণ খুঁজে চিকিৎসা করানোই জীবন রক্ষার উপায়।
