ওড়িশার পুরীতে শুক্রবার শুরু হয়েছে শ্রী জগন্নাথদেবের বার্ষিক রথযাত্রা, যেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ ভক্ত সমবেত হয়েছেন এই ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসবের সাক্ষী হতে। শতাব্দীপ্রাচীন এই উৎসব উপলক্ষে শহরজুড়ে বিরাজ করছে ভক্তি, উৎসাহ ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য আবহ।
রথযাত্রার সূচনা হয় পাহান্ডি বিজে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যেখানে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে বিশাল কাঠের রথে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গুন্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে। রথ টানার জন্য ভক্তদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো, চারপাশে ধ্বনিত হচ্ছিল “জয় জগন্নাথ” ধ্বনি।
ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওড়িশা সরকার মোতায়েন করেছে ১০,০০০-এর বেশি পুলিশ সদস্য, যার মধ্যে রয়েছেন ২১ জন আইপিএস ও ১২০০ কর্মকর্তা। প্রথমবারের মতো এনএসজি কমান্ডো, মেরিন পুলিশ, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন। শহরজুড়ে বসানো হয়েছে ২৭৫টি এআই-চালিত সিসিটিভি ক্যামেরা, এবং আকাশপথে নজরদারির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি।
ভক্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে ৬৯টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং মোতায়েন করা হয়েছে ৬৪টি অ্যাম্বুলেন্স। জেলা সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত ৩৭৮ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। ডায়রিয়ার সংক্রমণ রোধে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা এবং সরবরাহ করা হয়েছে ২০ লক্ষ বোতল বিশুদ্ধ পানীয় জল।
রথযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘সোনার ঝাড়ু’ রীতি, যেখানে পুরীর রাজপরিবারের সদস্যরা রথের পথ সোনার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন। এই আচার ভক্তি, সমতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বাস করা হয়, এই ঝাড়ু দিয়ে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং পরিবেশ পবিত্র হয়।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করুক।” বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র বলেন, “আজ ঈশ্বর স্বয়ং ভক্তের মাঝে—এটাই সনাতন সংস্কৃতির সৌন্দর্য।”
রথযাত্রা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা ও গুজরাটের আহমেদাবাদে পালিত হচ্ছে অনুরূপ উৎসব, যেখানে লক্ষাধিক ভক্ত অংশ নিচ্ছেন।
এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত, যেখানে ভগবান নিজেই ভক্তদের মাঝে এসে আশীর্বাদ প্রদান করেন।
