December 23, 2024

এই স্বাধীনতা দিবসে, ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালের (পিএমআই) ভারতে সহায়ক সংস্থা আইপিএম ইন্ডিয়া, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং উপভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য অবৈধ তামাক ব্যবসা প্রতিরোধের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করেছে। অবৈধ তামাক ব্যবসা, বিশ্বব্যাপী বড় হুমকি এবং ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে এই অবৈধ ব্যবসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালের FICCI ক্যাসকেড সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে অবৈধ সিগারেটের সামগ্রিক বাজার আনুমানিক ২২,৯৩০ কোটি টাকার। রিপোর্ট অনুসারে, তামাক শিল্পের অবৈধ বাজারের কারণে ২০২২ সালে ভারত সরকারের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৩,৩৩১ কোটি টাকা, যা ২০১২ সালে ৬,২৪০ কোটি টাকা থেকে বেশি, ক্ষতি বৃদ্ধির পরিমাণ ৪৬%। টোব্যাকো ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (টিআইআই) এর মতে, আন্তর্জাতিকভাবে চোরাচালান এবং স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত কর-ফাঁকি দেওয়া সিগারেটের অবৈধ ব্যবসা ভারতের মোট সিগারেট শিল্পের এক-চতুর্থাংশ।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২০২৪ সাল জুড়ে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি ভারতের নানা শহর জুড়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিগারেট বাজেয়াপ্ত করেছে। গুয়াহাটিতে শুল্ক আধিকারিক এবং রেল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ১১ লক্ষেরও বেশি স্টিক বাজেয়াপ্ত করেছে, আসাম রাইফেলসও বাজেয়াপ্ত করেছে অনেক অবৈধ স্টিক। বিশাখাপত্তনমে পুলিশ ও শুল্ক দফতর ২১ লক্ষেরও বেশি স্টিক বাজেয়াপ্ত করেছে, অন্যদিকে বিজয়ওয়াড়ায় ৭৫টি বাক্স সহ মোট স্টিক বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১০৩ লক্ষেরও বেশি। হায়দরাবাদের পুলিশ বাহিনী ২৬৭ টি কার্টন এবং ৪.৫ লক্ষ স্টিক বাজেয়াপ্ত করেছে। পাশাপাশি, লখনউয়ের শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা ২.১২ লক্ষেরও বেশি স্টিক এবং প্রচুর পরিমাণে প্যাক ও বাক্স বাজেয়াপ্ত করেছেন। এছাড়াও কালিকট বিমানবন্দর, ফরিদাবাদ, অমৃতসর এবং ইন্দোর কাস্টমস, পুলিশ এবং ডিআরআই -ও বিভিন্ন সময় এই ধরণের অবৈধ সিগারেট স্টিক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুনে ও শিলচর, রায়পুর, সুরাট এবং আহমেদাবাদে ডিআরআই ৮৫ লক্ষেরও বেশি স্টিক বাজেয়াপ্ত করেছে। সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে ভারতে অবৈধ সিগারেটের পরিমাণ ৩০.২ বিলিয়ন স্টিকে পৌঁছেছে, যা কেবল চীন এবং ব্রাজিলের পিছনে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী, অবৈধ বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিপ মরিস প্রোডাক্টস এসএ কর্তৃক পরিচালিত KPMG ২০২২ সালের বার্ষিক গবেষণা ‘ইলিসিট সিগারেট কনজামশন ইন দ্য ইইউ, ইউকে, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, মলদোভা অ্যান্ড ইউক্রেন’, থেকে জানা গেছে যে শুধুমাত্র ইইউ জুড়ে ৩৫.৮ বিলিয়ন অবৈধ সিগারেট সেবন করা হয়েছে, যার ফলে সরকারগুলি আনুমানিক ১১.৩ বিলিয়ন ইউরো কর রাজস্ব হারিয়েছে – এই পরিমাণ ২০২১ সালের তুলনায় ৮.৫% বেশি। জাল সামগ্রী ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ইইউতে অবৈধ বাজারের বৃদ্ধি আংশিকভাবে বেড়েছে, যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নকল পণ্যের সিংহভাগই (৬১.৫%) ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রান্সে।

অবৈধ তামাক এর ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইপিএম ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নভনীল কর বলেন, “অবৈধ ব্যবসাকে পুরোপুরি নির্মূল করা আমাদের দীর্ঘদিনের অগ্রাধিকার এবং অপারেশনাল শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ও টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য লাগাতার প্রয়াসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিশ্বব্যাপী, অবৈধ ব্যবসা রোধে পিএমআই এর কৌশল পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে- গবেষণা ও বুদ্ধিমত্তা, সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষা, অংশীদারিত্ব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সহযোগিতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা বাজেয়াপ্ত করা পণ্যগুলি পরিদর্শন ও প্রমাণীকরণ এবং ফরেনসিক মূল্যায়ন এর মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে সহায়তা করছি। পাশাপাশি অবৈধ পণ্যগুলির শ্রেণীবিন্যাস, সম্ভাব্য চোরাচালান এর পথ এবং কালো বাজারির প্রবণতা সম্পর্কে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার কাজও আমরা করি। পাশাপাশি আমরা যেসব উদ্ভাবনী যাচাইকরণ ও সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করি সে সম্পর্কেও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

ভারতেও আমরাও এই উদ্দেশে সমানভাবে লগ্নী করেছি, একইসঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে অবৈধ তামাকের কারবার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করি। সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, অবৈধ ব্যবসা মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য অত্যাবশ্যক। আন্তঃসংযুক্ত সিস্টেম ও ডিজিটালি যাচাইকৃত ট্র্যাক-অ্যান্ড-ট্রেস সিস্টেম, হলোগ্রাম, কিউআর কোড এবং আরএফআইডি ট্যাগ এর মতো উন্নত প্রযুক্তি নকল পণ্য পরীক্ষা ও সনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয়। যেহেতু ভারত বিশ্বের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস হয়ে ওঠার পথে অগ্রসর হচ্ছে, তাই অবৈধ ব্যবসা ঠেকানো এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ”, তিনি আরো জানালেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *