আধুনিক যুগে যখন সমাজ প্রযুক্তি এবং নীতিগত সমাধানের দিকে তাকায়, তখন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং শিক্ষার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের জীবনকে সত্যিকারের অর্থে উন্নত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মনে করিয়ে দেয় ভারতীয় বিদ্যা ভবনের গুৱাহাটী কেন্দ্র। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রটি অসমের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে একটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে, যা প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলছে, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া বাড়াচ্ছে এবং নাগরিকদের সম্মানজনক ও সচেতন জীবনযাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে।
ভারতীয় বিদ্যা ভবনের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে—যা শিক্ষা এবং সেবার মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরায় একীকরণের উপর জোর দেয়—গুৱাহাটী কেন্দ্রটি চেয়ারপারসন হিমাংশু শেখর দাসের নেতৃত্বে (অসমের সাবেক চিফ ইনফরমেশন কমিশনার) এবং সেক্রেটারি এস.কে. দাসের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কেন্দ্রটি কেবল একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সমাজ-সচেতন প্ল্যাটফর্ম, যা সামাজিক একীকরণের জন্য কাজ করে।
কেন্দ্রটির সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচিগুলি অসমের সম্প্রদায়কে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। সাম্প্রতিককালে, এটি নাগরিক সচেতনতা প্রচারের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং সেমিনার আয়োজন করেছে, যেখানে রাইট টু ইনফরমেশন (আরটিআই) এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলি সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে, যা বিশেষ করে গ্রামীণ এবং শহুরে দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল অ্যাওয়ারনেস ওয়ার্কশপগুলিতে অংশগ্রহণকারীরা সাইবার নিরাপত্তা এবং অনলাইন সেবার ব্যবহার শিখেছেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করে তুলেছে।
এছাড়া, কেন্দ্রটি বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যেমন ‘এজিং গ্রেসফুলি’ সিরিজ। এই কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য, মানসিক সুস্থতা এবং সামাজিক একীভূতকরণের উপর আলোচনা হয়, যা বয়স্কদের একাকীত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাদের সমাজের সক্রিয় অংশ করে তোলে। এই উদ্যোগগুলি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নয়নই নয়, পুরো সম্প্রদায়ের সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ ঘটাচ্ছে।
অসমের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ভারতীয় বিদ্যা ভবনের কালা কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অসমীয়া হোলিগীত, ভরতনাট্যম এবং সত্রীয়া নৃত্যের উপর ওয়ার্কশপগুলি ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক নাগরিক এবং সাংস্কৃতিক উত্সাহীদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ সৃষ্টি করেছে। এই কার্যক্রমগুলি কেবল শিল্প শিক্ষাই দেয় না, বরং সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করে, যা বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষকে একত্রিত করে।
প্রতিষ্ঠানটির এই প্রচেষ্টা অসমের যুবক-যুবতীদের মধ্যে ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলছে এবং তাদের আধুনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সাহায্য করছে। ফলে, সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করছে।
