December 6, 2025
13

গুয়াহাটি, ৩ সেপ্টেম্বর — একসময় শরতের আগমনী বার্তা ও মনোরম আবহাওয়ার জন্য পরিচিত সেপ্টেম্বর মাস এখন গুয়াহাটিতে রূপ নিচ্ছে এক অসহনীয় গরমের মরসুমে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই শহরের আবহাওয়া চক্রে দেখা যাচ্ছে গভীর পরিবর্তন, যা শুধু অস্বস্তি নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগজনক সংকেত বহন করছে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গুয়াহাটিতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকছে, মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলেও গরমের তীব্রতা কমছে না। ২ সেপ্টেম্বর শহরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, আর আর্দ্রতার কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই পরিবর্তন শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। চান্দমারির ৬৭ বছর বয়সী মঞ্জু দেবী স্মরণ করেন, “আগে সেপ্টেম্বর এলেই সোয়েটার বের করতাম। এখন তো ফ্যানেও স্বস্তি নেই।” চিড়িয়াখানা টিনিআলির পম্পিতা হাজারিকা বলেন, “বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই এখন ক্লান্তিকর। এটা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল।”

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের তাপপ্রবাহ আর মৌসুমি ব্যতিক্রম নয়, বরং বৃহত্তর জলবায়ু সংকটের অংশ। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী শান্তনু গোস্বামী বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়বে। উচ্চ তাপ ও আর্দ্রতা মানুষের আরামদায়ক জীবনযাত্রার পরিপন্থী।”

গবেষণা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে গুয়াহাটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা ২১.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শহরটিকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ শ্রেণিতে ফেলেছে। গড় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও বায়ু দূষণের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।

এই পরিবর্তিত সেপ্টেম্বরের চিত্র শুধু আবহাওয়ার নয়, বরং একটি গভীরতর সংকটের প্রতিচ্ছবি—যেখানে শহর, প্রশাসন ও নাগরিকদের একত্রে কাজ করে অভিযোজন ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *