December 6, 2025
4

নলবাড়ি, ১২ জুলাই — অসমে বর্ষার তাণ্ডবে যখন ২০টি জেলার প্রায় ১.২০ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে, তখন নলবাড়ির পাগলাদিয়া নদীর অস্বাভাবিক জলস্তর হ্রাস উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রাজ্যের বিভিন্ন নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নতুন এলাকা প্লাবিত করছে, অন্যদিকে পাগলাদিয়া নদীর কিছু অংশে জলস্তর বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে, যা পরিবেশবিদ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

অসম রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ASDMA)-এর তথ্য অনুযায়ী, নলবাড়ি জেলার ছয়টি রাজস্ব চক্রের ১০৮টি গ্রাম বর্তমানে জলমগ্ন, যেখানে প্রায় ৪৫,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ময়রারাঙ্গা ও বটাঘিলা গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবার রাস্তা ও বাঁধে অস্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরি করে বসবাস করছে। পাগলাদিয়া নদী, যা সাধারণত বর্ষায় উথলে ওঠে, এবার কিছু অংশে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে—নদীর তলদেশ দৃশ্যমান, জল প্রবাহ কম, এবং কৃষি জমিতে জল পৌঁছাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ রাজবংশী বলেন, “আমার বাড়িতে হাঁটু জল ঢুকে গেছে, কিন্তু নদীর পাশের জমি শুকনো। এটা আগে কখনও দেখিনি।” অপর বাসিন্দা জ্যোতিষ রাজবংশী জানান, “বন্যায় সবকিছু হারিয়েছি, কিন্তু নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষিকাজও থমকে গেছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর জলস্তর হ্রাসের পেছনে থাকতে পারে ভুটান থেকে আসা প্রবাহে বাধা, অতিরিক্ত নদী শাসন, কিংবা জলাধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটি। পাগলাদিয়া নদীর উপর তৈরি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুযায়ী, নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এবং জল পুনঃচক্রণের ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।

জেলার কৃষি জমির প্রায় ৩১০ হেক্টর ইতিমধ্যে বন্যার জলে ডুবে গেছে, এবং দুইটি বাঁধ, ১৫টি রাস্তা, দুইটি সেতু ও একাধিক কৃষি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল NDRF, SDRF, এবং দমকল বিভাগ মিলিয়ে ১২৮০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

এই বৈপরীত্য—একদিকে বন্যা, অন্যদিকে নদী শুকিয়ে যাওয়া—অসমের জল ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ভারসাম্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে নদী ও মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *