
গুয়াহাটি, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন বা CAA-র আওতায় কাট-অফ তারিখ ২০১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০২৪ পর্যন্ত করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রের “ভোটব্যাংক রণনীতি” বলে কটাক্ষ করল অসম প্রদেশ কংগ্রেস। দলটির দাবি, এই পদক্ষেপ অসমের জাতিগত ভারসাম্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর সরাসরি আঘাত।
১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে—আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অ-মুসলিম শরণার্থীরা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এলে CAA-র আওতায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর ফলে আগের ২০১৪ সালের সীমা ১০ বছর বাড়ানো হল।
অসম কংগ্রেসের বিধায়ক দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তি অসমের জন্য এক কালো দিন। অসম চুক্তির ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের কাট-অফ তারিখকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হল।” তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত অসম আন্দোলনের আত্মত্যাগকে অপমান করে।
কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (AASU)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যৌথ প্রতিবাদের জন্য। দলটির মতে, এই সিদ্ধান্ত অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দেবে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।
অসম জাতীয় পরিষদ (AJP) এই ইস্যুতে গুয়াহাটিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। AJP নেতা লুরিনজ্যোতি গগৈ এবং জগদীশ ভূঁইয়া বলেন, “CAA-র সময়সীমা ১০ বছর বাড়িয়ে বিজেপি অসমের উপর বিদেশিদের বোঝা ৪৩ বছর থেকে ৫৩ বছরে নিয়ে গেল। এটা ভয়ঙ্কর অন্যায়।”
আম আদমি পার্টি (AAP)-ও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজীব শইকিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি কেন্দ্র সরকার দেশের মানুষের মতামত নিয়েছিল?”
যদিও বিজেপি দাবি করছে, CAA একটি মানবিক পদক্ষেপ, বিরোধীরা বলছে এই সময়সীমা বাড়ানো নির্বাচনের আগে ভোটব্যাংক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। বিশেষ করে অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ফের একবার নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয় ও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা জানিয়েছে, তারা আইনি ও রাজনৈতিক স্তরে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।