রাজ্যজুড়ে মাতৃস্বাস্থ্যের করুণ অবস্থা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই, আসামের তিনসুকিয়ায় ৩০ বছর বয়সী ভারতী তাঁতি এবং তার নবজাতকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা শনিবার রাতে ডেমুলি টি এস্টেটে ঘটে, যা আসামের চা বাগানগুলিতে স্বাস্থ্যসেবার, বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার মারাত্মক অভাব আবারও তুলে ধরল।
স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (SRS) বুলেটিন ২০২২ অনুসারে, আসামে দেশের সর্বোচ্চ মাতৃমৃত্যুর অনুপাত (MMR) রয়েছে, যেখানে প্রতি ১,০০,০০০ জীবিত জন্মে ১৯৫ জন মা মারা যান, যা জাতীয় গড় ৯৭ এর থেকে অনেক বেশি।
ভারতী তাঁতি বাড়িতে মৃত সন্তান প্রসবের পর তার অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অ্যাম্বুলেন্সটি কয়েক মাস ধরে অকেজো ছিল এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটিও অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটি ব্যক্তিগত গাড়ি জোগাড় করা হলেও, হাসপাতালে পৌঁছানোর পথেই ভারতী তাঁতির মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় চা বাগান শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাতে শত শত শ্রমিক মা ও মৃত শিশুর মরদেহ নিয়ে এস্টেট কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং জরুরি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা প্রদানে ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানান। তারা ডেমুলি টি এস্টেটের অব্যবস্থাপনা এবং অপর্যাপ্ত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার সমালোচনা করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং অতীতেও অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে বেশ কয়েকটি মাতৃমৃত্যু ঘটেছে।
অল আসাম টি ট্রাইবস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ATTSA) পূর্বে একটি কার্যকরী অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে এবং তদন্তের আশ্বাস দেয়। আসাম চাহ মজদুর সংঘ (ACMS) এস্টেট ম্যানেজারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে শ্রমিকদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে।
এই ঘটনা আসামের চা বাগানগুলির দুর্বল অবকাঠামো, পরিবহনের অভাব এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সমস্যার চিত্র তুলে ধরেছে। শ্রমিক ইউনিয়ন এবং স্থানীয়রা এখন আসাম শ্রম বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিটি চা বাগানে কার্যকর অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, চিকিৎসা কর্মী এবং জরুরি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
