গোলপাড়া, ১১ জুলাই ২০২৫ — অসমের গোলপাড়া জেলার পাইকান রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে প্রায় ৯৫ শতাংশ দখলদার পরিবার উচ্ছেদ অভিযানের আগেই স্বেচ্ছায় সরে গেছে বলে জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। এই পদক্ষেপটি রাজ্যজুড়ে চলমান বনভূমি পুনরুদ্ধার অভিযানের অংশ, যা গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক খানিন্দ্র চৌধুরী জানান, “প্রায় ৯০–৯৫% পরিবার ইতিমধ্যে তাদের অস্থায়ী ঘরবাড়ি ভেঙে মালপত্র নিয়ে চলে গেছে। এখন শুধু পাকা বা ইটের নির্মাণগুলোই রয়ে গেছে।” উচ্ছেদ অভিযানটি মূলত ১,০৪০ বিঘা বনভূমি পরিষ্কার করার লক্ষ্যে কৃষ্ণাই ফরেস্ট রেঞ্জ-এ পরিচালিত হবে।
এই অভিযানটি মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় শুক্রবারের নামাজ বিবেচনা করে একদিন পিছিয়ে ১২ জুলাই নির্ধারিত হয়েছে। বন বিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার তেজাস মারিস্বামী জানান, প্রায় ১,০৮০ পরিবার বনভূমিতে বসবাস করছিল এবং তাদের প্রথমে ২০২৪ সালের নভেম্বর–ডিসেম্বরে নোটিশ দেওয়া হয়, পরে ২০২৫ সালের জুনে নতুন নির্দেশে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে এলাকা ছাড়তে বলা হয়।
২০২৩ সাল থেকে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে চারটি বন রেঞ্জে ৬৫০ হেক্টর জমি থেকে দখলদারদের সরিয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে ২০০ হেক্টর ছিল বসতি এবং ৪৫০ হেক্টর কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত।
এদিকে, রাজ্যজুড়ে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই ধুবরির চরুয়া বাকরা, চিরাকুটা ও সন্তোষপুর গ্রামে প্রায় ১,১০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৩,৫০০ বিঘা জমি থেকে, যেখানে আদানি গ্রুপের ৩,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বৃহস্পতিবার জানান, গত চার বছরে ২৫,০০০ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলিকে পানীয় জল ও মৌলিক পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।”
অন্যদিকে, কংগ্রেস দল রাজ্য সরকারের উচ্ছেদ নীতির সমালোচনা করে জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে বিজেপি শাসনকালে উচ্ছেদ হওয়া ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ দেবে।
এই ঘটনাটি অসমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবাধিকার-এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জকে আবারও সামনে এনেছে।
