উত্তর জেলার শনিছড়া এলাকায় সোমবার দুপুরে ঘটে গিয়েছে রোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুষ্কৃতীর ধারালো অস্ত্রের হামলায় মৃত্যু হয় মাত্র ৮ বছরের অমৃত সিনহার। গুরুতরভাবে জখম হন তাঁর মা বিজয়া সিনহা, যিনি বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিলচর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি কেন্দ্র করে শনিছড়া সহ পার্শবর্তী এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, বিকেলের পর থেকে রীতিমতো ফেটে পড়ে জনরোষ। জানা গেছে, বাগবাসা কভিনেন্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছুটি হওয়ার পর মা-ছেলে স্কুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন। নদীয়াপুর এলাকার অর্জুন টিলা সংলগ্ন রাস্তায় পৌঁছানোর পর একটি ওয়াগনার গাড়িতে করে এসে একদল দুষ্কৃতী অতর্কিতে মা ও ছেলের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। মুহূর্তেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তারা। হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় মা-ছেলেকে রাস্তার ধারে ফেলে দুষ্কৃতীরা এলাকা থেকে চম্পট দেয় এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। পথচারীদের নজরে পড়তেই আহত দু’জনকে দ্রুত শনিছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অরিজিৎ দাস শিশুটি অমৃত সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুরুতর আহত বিজয়া সিনহাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বিজয়া সিনহা ও তার স্বামী অরুণ কান্তি সিনহার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। অরুণ কান্তি সিনহা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মরত। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গেও পরিবারটির বিবাদ ছিল বলে জানা যায়। এই সূত্র ধরে অনেকের আশঙ্কা, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই হতে পারে এই পরিকল্পিত নৃশংস আক্রমণ। তবে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। পুলিশও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। ঘটনার পর পরই পুলিশের ভূমিকা ঘিরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধ মানুষের অভিযোগ, দুপুর দু’টোর দিকে হামলার ঘটনা ঘটলেও দীর্ঘ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি এবং ততক্ষণ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেয়নি। এই অভিযোগে সন্ধ্যে নাগাদ স্থানীয়রা শনিছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের একটাই দাবি অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে এবং পরিবারটিকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়। চুরাইবাড়ি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে আস্থা হারিয়ে ক্ষুব্ধ জনতা লম্বাগাছ এলাকায় ৮ নম্বর আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এতে দুই দিকেই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। মাত্র ৮ বছরের এক শিশুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে শনিছড়া-বাগবাসা অঞ্চল জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে একযোগে সরব। এই নৃশংস ঘটনায় ঠিক কোন সূত্রে আঘাত হানল দুষ্কৃতীরা, কারা এর নেপথ্যে সেই রহস্যের জট এখন পুলিশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তদন্তে কী উঠে আসে, তা জানার অপেক্ষায় পুরো এলাকা।
